কঠোর সমালোচনার মুখে শালিন পোশাকের সেই মৌখিক বিধান প্রত্যাহার করল বাংলাদেশ ব্যাংক।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান এক বিবৃতিতে একথা জানান।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকে কর্মরত সকল স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় অফিস সময়ে পেশাদার ও মার্জিত পোশাক পরিধানের পরামর্শ প্রদানের বিষয়ে স্ব স্ব বিভাগীয় সভায় আলোচনায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। তবে, এ বিষয়ে কোন নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি এবং এ সংক্রান্ত কোন সার্কুলারও জারি করা হয়নি। মিডিয়ার মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ এ বিষয়টি বিদেশে অবস্থানরত মাননীয় গভর্নর মহোদয়ের গোচরীভূত হলে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং তাঁর নির্দেশনা মোতাবেক বিষয়টি এ মূহুর্তে প্রত্যাহার করা হলো।
এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের সকল স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য পোশাক সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে নারী কর্মীদের জন্য শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ ও ওড়না বা অনুরূপ পেশাদার এবং শালীন পোশাক পরিধানের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে ছোট হাতার জামা, স্বল্প দৈর্ঘ্যের পোশাক এবং লেগিংস পরিহার করতে বলা হয়েছে।
গত সোমবার (২১ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগ-২ থেকে এ সংক্রান্ত একটি অফিস নির্দেশনা জারি করা হয়।
নির্দেশনায় বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগ-২ (বেনিফিটস অ্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন উইং)’ কর্তৃক আয়োজিত একটি মাসিক বিভাগীয় সভায় পোশাকবিধি অন্তর্ভুক্ত করে কিছু সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এই সিদ্ধান্তের আওতায় ১১ (ঘ) নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, সমাজ ও দাপ্তরিক পরিবেশের প্রেক্ষাপটে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেশাদার, মার্জিত ও শালীন পোশাক পরিধান করতে হবে।
পুরুষ কর্মীদের জন্য নির্ধারিত পোশাক হিসেবে ফরমাল শার্ট (লম্বা বা অর্ধহাতা), ফরমাল প্যান্ট ও ফরমাল জুতা পরার কথা বলা হয়েছে। জিনস ও গ্যাবার্ডিন জাতীয় পোশাক পরিহার করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নারী কর্মীদের ক্ষেত্রে বলা হয়, শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ ও ওড়না বা অনুরূপ শালীন ও পেশাদার পোশাক পরিধান করতে হবে, যা দেখতে সাদামাটা এবং রঙে মার্জিত হবে। ফরমাল জুতা বা স্যান্ডেল, হেডস্কার্ফ বা হিজাব (যদি পরিধান করেন) – এসব পোশাকের ক্ষেত্রেও শালীনতা বজায় রাখতে বলা হয়েছে। শর্ট স্লিভ ও স্বল্প দৈর্ঘ্যের পোশাক এবং লেগিংস পরিধান না করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
একইসঙ্গে অফিসে ইতিবাচক কর্মপরিবেশ তৈরিতে কিছু নীতিমালার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ১১ (ক), (খ), ও (গ) ধারায় যথাক্রমে উল্লেখ করা হয়—
নারী কর্মীদের প্রতি আচরণে বাংলাদেশ ব্যাংক স্টাফ রেগুলেশন ২০০৩-এর ৩৯ ধারা মেনে চলতে হবে।
যৌন হয়রানি সংক্রান্ত অভিযোগ ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে নির্ধারিত কমিটির কাছে পাঠাতে হবে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে প্রণীত অফিস নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে।
শিষ্টাচার, সময়ানুবর্তিতা, সততা, সহকর্মীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ বজায় রাখতে হবে।
১২ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, এই নির্দেশনাগুলোর যথাযথ পর্যবেক্ষণ ও বাস্তবায়নের জন্য প্রতিটি বিভাগ, প্রকল্প, সেল বা ইউনিটে একজন কর্মকর্তা মনোনীত করা হবে। তিনি প্রয়োজনে বিভাগীয় প্রধানকে অবহিত করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবেন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান ২৩ জুলাই রাতে গণমাধ্যমকে জানান, বিভিন্ন বয়সী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পোশাকের বৈচিত্র্য অনেক সময় কর্মপরিবেশে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। তাই এই নির্দেশনা একটি পেশাদার পরিবেশ ও বোঝাপড়া বৃদ্ধির লক্ষ্যে জারি করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এটি বাধ্যতামূলক নয়, বরং একটি পরামর্শমূলক নির্দেশনা। এতে বোরকা বা হিজাব পরায় কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি। অতিরিক্ত কারুকাজ ও প্রদর্শনমূলক পোশাক নিরুৎসাহিত করা হয়েছে, তবে কারো স্বাধীনতা খর্ব করার উদ্দেশ্য নেই।



GIPHY App Key not set. Please check settings