চুয়াডাঙ্গা-আলমডাঙ্গা সড়কে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে নীরবে দাঁড়িয়ে আছে ‘চন্দ্রাবতী ইন্দারা। এ ইন্দারার পেছনে লুকিয়ে আছে এক করুণ এক ইতিহাস যা মানুষকে দারুণভাবে নাড়া দেয়। এক সময় এই এলাকার আশপাশের গ্রামের চাষীরা ৩০ বর্গমাইল বিরাট মাঠে চাষাবাদ করার সময় খাবার পানির তীব্র অভাব অনুভব করত। পিপাসায় কাতর হয়ে তারা নবগঙ্গার দূষিত পানি পান করে ডাইরিয়া, কলেরার মত বিভিন্ন রোগ ব্যাধিতে অকালে মৃত্যু পরিনত হত।
আজ থেকে প্রায় একশ’ বছর পূর্বে কৃষকদের পানির পিপাসা দূর করার জন্য ‘চন্দ্রাবতী’ নামে এক পতিতার টাকায় এ ইন্দারা খনন করা হয়। এখন প্রশ্ন, কে এই ‘চন্দ্রাবতী’, কি তার পরিচয়? আজ থেকে প্রায় দু’শ বছর আগে চুয়াডাঙ্গার কুলচারা গ্রামের গোয়ালরা ছিল ধন-সম্পত্তীর মালিক। টাকার লোভে তাদের বাড়িতে ডাকাত দল হানা দিতো। ধনরতœ টাকা-পয়সা লুট করার সময় গোয়ালাদের এক পরমা সুন্দরী কন্যা ‘চন্দ্রাবতী’কে তুলে নিয়ে যায়। ডাকাত সরদার ঘটনা জানতে পেরে তার সম্ভ্রমহানি না করে তাকে পৌঁছে দেয় তার পরিবারের কাছে সম্মানের সাথে। সমাজের ভয়ে চন্দ্রাবতীকে তার বাবা তাকে আশ্রয় দিতে পারে না। আশ্রয় না পেয়ে সে দুষ্টচক্রের হাতে পড়ে। এ চক্র ইচ্ছামত তার দেহ উপভোগ করে তাকে পতিতার কাজ করতে বাধ্য করে। হাত বদল হতে হতে সে এক সময় জমিদার বাবুর কাছে আশ্রয় পায়। জমিদার বাবু মরার পূর্বে তাকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে যায়। এভাবে ৩০ বছর পার হয়ে যায়। যৌবন শেষ হয়ে আসে। মনের পরিবর্তন হতে থাকে চন্দ্রাবতীর। জীবনে যত পাপ সে করেছে তার কি ক্ষমা আছে? ভেবে ভেবে সে কুলকিনারা পায় না। সে এলাকার সমাজপতিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে থাকে।
অবশেষে হাজরাহাটি গ্রামের দানেজ ও নেহাল বিশ্বাস তাকে তওবা করে মুসলমান হবার জন্য উপদেশ দেন। অবশেষে তাদের পরামর্শে সে বোয়ালমারীর মসজিদের ইমামের কাছে যেয়ে তওবা করে মুসলমান হয়। এরপর সে পানীয় জলের অভাব দূর করার জন্য জমি ক্রয় করে ইন্দারা খনন করে দেয়। সাথে বিশ্রামের জন্য একটা ঘর করে দেয়। মাঠের চাষীরা জমি চাষ করে ক্লান্ত হয়ে এখানে বসে পিপাসা দূর করত।
চন্দ্রাবতী নেই। জরাজীর্ণ অবস্থায় তার খনন করা ইন্দারা পড়ে আছে। সমাজ জীবনের যাঁতাকলে চন্দ্রাবতী একদিন কলঙ্কময় জীবন যাপন করেছে, শেষ জীবনের কর্ম ফলে তার পাপ কি ক্ষয় হবে? সংস্কারের অভাবে জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে কালের স্বাক্ষী হয়ে চন্দ্রাবতী ইন্দারা।
GIPHY App Key not set. Please check settings