শেখ হাসিনার শাসনের শেষ ৩৬ দিনের চিত্র তুলে ধরেছে আল জাজিরা। আল জাজিরার আই-ইউনিট (ইনভেস্টিগেশন ইউনিট) ওই সময়ে গোপনে রেকর্ড করা ফোন কল পেয়েছে, যাতে শেখ হাসিনা ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানের সময় ছাত্র বিক্ষোভকারীদের উপর প্রাণঘাতী শক্তি প্রয়োগের নির্দেশ দিয়েছিলেন।
‘হাসিনা–৩৬ ডেজ ইন জুলাইস’ নামে অনুসন্ধানটি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রীর শাসনের শেষ দিনগুলোতে তার ঘনিষ্ঠ মহলে নিয়ে যায়।
তিন সপ্তাহের রক্তাক্ত বিক্ষোভে ১৫ শতাধিক মানুষ নিহত হয়, পঁচিশ হাজারেরও বেশি আহত হয় এবং শেখ হাসিনার নিরাপত্তা বাহিনী ৩০ লাখেরও বেশি গুলি ছোড়ে।
শেখ হাসিনার করা ফোন কলগুলো তার নিজস্ব গোয়েন্দা সংস্থা রেকর্ড করেছিল, যারা তাকে বাংলাদেশকে শক্ত হাতে শাসন করতে সাহায্য করেছিল।
২০২৪ সালের ১৮ জুলাই একটি রেকর্ডিংয়ে শেখ হাসিনা ঢাকা দক্ষিণের সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসকে বলেন: “আমার নির্দেশ ইতিমধ্যেই দেওয়া হয়েছে। আমি সম্পূর্ণরূপে একটি উন্মুক্ত আদেশ জারি করেছি। এখন তারা প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করবে, যেখানেই পাবে সেখানেই গুলি করবে…..এটা নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমি এতদিন পর্যন্ত তাদের থামিয়ে রেখেছিলাম…আমি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা ভাবছিলাম।”
রেকর্ডিংগুলো বিক্ষোভ দমন করার জন্য হেলিকপ্টার ব্যবহারের কথাও প্রকাশ করে: “…যেখানেই তারা কোনো সমাবেশ লক্ষ্য করে, তা উপর থেকে—এখন এটি উপর থেকে করা হচ্ছে—এটি ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি জায়গায় শুরু হয়েছে। এটি শুরু হয়েছে। কেউ কেউ সরে গেছে।”
প্রামাণ্য চিত্রে একজন ডাক্তার হেলিকপ্টার থেকে চালানো গুলিতে অনেক বিক্ষোভকারী নিহত এবং আহত হওয়ার দাবির সত্যতা নিশ্চিত করেন।
অনুসন্ধানটি আরো প্রকাশ করে যে, আবু সাঈদ হত্যার ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ সরকার কীভাবে হুমকি এবং ঘুষ দিয়েছিল। তার মৃত্যু দেশব্যাপী ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।
গোপন ফোনকল শেখ হাসিনার সবচেয়ে শক্তিশালী মিত্র সালমান এফ রহমান কীভাবে আবু সাঈদের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট সংগ্রহের চেষ্টা করেছিলেন, গুলির কোনো উল্লেখ মুছে ফেলার জন্য কীভাবে পাঁচবার এটি পরিবর্তন করা হয়েছিল এবং কীভাবে তার পরিবারকে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে বাধ্য হয়েছিল- সেটা প্রকাশ করে।
আল জাজিরার তদন্তকারী ইউনিট কর্তৃক পুনরুদ্ধার করা গোপনীয় নথিগুলো ইন্টারনেট বন্ধ করতে এবং সহিংসতার রক্তাক্ত ছবি বিশ্বে পৌঁছাতে না দেওয়ার জন্য হাসিনার সরকার কর্তৃক ব্যবহৃত নোংরা কৌশলগুলো প্রকাশ করে।
এ সব বিষয়ে আল জাজিরাকে দেওয়া এক বিবৃতিতে আওয়ামী লীগের একজন মুখপাত্র বলেছেন, “শেখ হাসিনা কখনো ‘মারাত্মক অস্ত্র’ শব্দটি ব্যবহার করেননি এবং নিরাপত্তা বাহিনীকে প্রাণঘাতী বল প্রয়োগের জন্য বিশেষভাবে অনুমোদন বা নির্দেশ দেননি। এটি ১৮ জুলাই রেকর্ডিংয়ের সত্যতা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা বিশ্বাস করেন যে বিক্ষোভকারীদের দ্বারা সৃষ্ট ক্ষতির কারণে ইন্টারনেট বন্ধ ছিল।



GIPHY App Key not set. Please check settings